Friday 21 January 2011

বিচারকদের অপসারণে সংসদের ক্ষমতা রাখার পরামর্শ সুরঞ্জিতের

বিচারকদের অপসারণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপন করে সংবিধান সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীতে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া বাহাত্তরের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বিচারকদের অপসারণ ও জবাবদিহিতার বিধান সংসদের হাতে ছিল। পঞ্চম সংশোধনীতে জিয়াউর রহমান ও তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এএসএম সায়েম ৯৬ অনুচ্ছেদ বাতিল করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রণয়ন করে। তাতে বিচারপতিদের জবাবদিহিতা আর সংসদের কাছে থাকে না।
উল্লেখ্য, সমপ্রতি উচ্চ আদালত কর্তৃক পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হওয়ার পর পুনঃমুদ্রিত সংবিধানে ৯৬ ধারা থাকবে কি-না তা নিয়ে সংসদ ও বিচারপতিদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আইন, বিচার ও নির্বাহি বিভাগ একে অন্যের পরিপূরক, কেউ কারো ওপরে নয়। বিচার বিভাগের উপর কেউ কোনো কর্তৃত্ব করতে পারবে না বলে প্রধান বিচারপতির সাম্প্রতিক মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর এ সদস্য। তিনি বলেন, সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সবাই সংসদের কাছে জবাবদিহি করবে। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। জনগণ সার্বভোমত্ব ক্ষমতার মালিক। সংসদ যেহেতু জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। জাতীয় সংসদ জনগণের কণ্ঠস্বর। তাই বিচার বিভাগসহ সকলকে সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কারণ এটা তো গ্রিক ডেমোক্রেসি না, সবাইকে ডেকে এনে বলা যায় না। তাই সকল কাজ-কর্মের জবাবদিহি সংসদের কাছে করতে হবে।
সুরঞ্জিত সেন বলেন, প্রধান বিচারপতি সংবিধান অনুযায়ী শপথ নেবেন। বিচারপতি দায়িত্বে অপারগতা প্রকাশ করলে বা স্খলন হলে তাকে অপসারণ বা অভিসংশন করার ক্ষমতা ৯৬ অনুচ্ছেদে সংসদকে দেয়া হয়েছে। সুরঞ্জিত বলেন, বিচারিক কাজে তারা সার্বভৌম। এ ব্যাপারে আমাদের কারো কোনো বক্তব্য নেই । কিন্তু তারা বার বার বিদেশ গেলে তার জবাবদিহি করবেন কোথায়। এ কথা ব্যারিস্টার রফিক সাহেবও করেছেন। সংবিধানকে চেক এন্ড বেলেন্স করেই তৈরি করা হয়েছে। ৯৬ ধারা বাদ দিলে সংবিধানের মৌল কাঠামো থাকবে না, চতুর্থ সংশোধনীতেও এ বিধানটি রাখা হয়েছিল । এটা বাদ দেয়ার অধিকার কারো নাই বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা।
এ সময় সংবিধান সংশোধন কমিটির এ কো-চেয়ারম্যান সংবিধানে এ অনুচ্ছেদটি ফিরিয়ে আনা হবে বলেও ইঙ্গিত দেন।
তিনি বলেন, জুডিসিয়াল অটোক্রেসি গণতন্ত্র হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্র হবে বিতর্ক হবে না আলোচনা হবে না তা হতে পারে না। কারণ যত বিতর্ক তত গণতন্ত্র।
সুরঞ্জিত বলেন, শুধু বিচারপতি নয়, সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি, ৭০'র ২ অনুযায়ী স্পিকার, ৫৭'র ২ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী, ৫৫'র ৩ ধারা অনুযায়ী কেবিনেট সদস্যের সবাইকে সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সুরঞ্জিত বলেন, পাকিস্তান ছাড়া কোনো দেশে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল নেই।
ঢাকা, ২১ জানুয়ারি (শীর্ষ নিউজ ডটকম): (শীর্ষ নিউজ ডটকম/ডিকেডি/এমএইচ/১৬.৪০ঘ.)

No comments:

Post a Comment